রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৬

বাংলা লেখা কেমন হবে



অহনলিপি-বাংলা১৪ ফন্ট প্যাকেজ ডাউনলোড লিংক:  



বাংলা লেখা কেমন হবে



বাংলা লেখা কেমন হবে 


   


বাংলা লেখা কেমন হবে
মনোজকুমার দ. গিরিশ 
পর্ব-১৮
          বাংলা বানান: আশা ও হতাশা

          একটি সাময়িক পত্র বেশ কিছুদিন আগে প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ডঃ পবিত্র সরকারকে চিহ্নিত করেছিল এযুগের সবচেয়ে মনস্ক ভাষাবিজ্ঞানী হিসেবে৤ আমিও তাঁর সম্পর্কে ঠিক তেমন ধারণাই পোষণ করি৤ তাঁর লেখা “পকেট বাংলা ব্যাকরণ” পড়ে মুগ্ধ হয়েছি৤ আমরা সাধারণ মানুষ হিসেবে চাই তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ “বাংলা” ব্যাকরণ লিখুন৤ সংস্কৃত এবং ইংরেজি মিশেলের বাংলা ব্যাকরণের কচকচি আমরা বুঝি না৤ তাঁর মতো বিজ্ঞ এবং বিশেষজ্ঞ আমাদের ব্যাকরণ-ভয় থেকে অব্যাহতি দিন৤বাংলার মতো মধুর-- বিশ্বের মধুরতম ভাষাটির পুষ্টি এবং পোষণ হোক৤
         


   রূপসী বাংলার কবি          জীবনানন্দ দাশ
            

এযুগে বাংলায়ও চালু হয়েছে কম্পিউটারের জন্য আন্তর্জাতিক মানের ইউনিকোড ফন্ট(হরফ সমূহ), যা বাংলা তথ্যপ্রযুক্তির জগতে জোয়ার এনেছে৤ এই নব্য বিকাশকে আমাদের সাদরে গ্রহণ করতে হবে৤ আন্তর্জাতিক মানের বাংলা ইউনিকোড ফন্ট দু-একজন তৈরিও করেছেন৤ আম্মো একটা করেছি৤ ইংরেজিতে AhanLipi বা বাংলায় “অহনলিপি” লিখে নেটে সার্চ দিলে যে লিংকগুলি দেখাবে তা ওপেন করে ফন্টটি ডাউনলোড করা যাবে৤ এটি ব্যবহার করে দেখুন৤ এই ফন্টে একাধিক স্কুলের প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে৤ শিক্ষার্থীরা এই আধুনিকতম সহজ ব্যবস্থায় খুশি, চালু ব্যবস্থাকে তারা তেমন পছন্দ করে না৤ এই পরীক্ষাটি করেছেন শিক্ষার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত আমার এক বন্ধু৤ তিনিই ফলাফলটি আমাকে জানিয়েছেন৤
          গত ২জানুয়ারি ২০১৬, আমার যে লেখাটি আজকাল-এ প্রকাশিত হয়েছে, তার পরবর্তী ভাবনা বরং প্রকাশ করি৤ ডঃ সরকার বলেছেন, “লোকে...নিজের উচ্চারণের একটা মোদ্দা রকম ছবি বানানে পায়” এই পাওয়াটাই যাতে পরিপূর্ণ হয় সেজন্যই কিছু চেষ্টা৤
          বাংলা বানান-সংস্কার নিয়ে প্রধান ভ্রান্তি দুটি-- (১)শব্দ ধরে ধরে সংস্কার, (২)বানানের সবটা একবারে সংস্কার৤ এর কোনওটাই সমস্যা সমাধানের পথ নয়৤
          শব্দ ধরে ধরে সংস্কার করতে গেলে বানান সংকট আরও বাড়বে, কারণ মনে সংশয় বাড়বে, মনে রাখা বা মুখস্থ করার জোরালো চাপ তৈরি হবে, ফলে ভুলগুলো ঠিক না হয়ে, বরং ভুল বাড়বে৤ মুখস্থ করার সঙ্গে সঙ্গে কোন্‌ শব্দে কোন্‌ সংস্কার হল তার ইতিহাসও তো মনে রাখতে হয়৤ নির্দিষ্ট সর্বমান্য কোনও অভিধানও কিছু নেই৤ ১৯৩৭-এ কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় যে বানান সংস্কার করেন (২০মে, ১৯৩৭, ৩য় সংস্করণ) তাতে কিছু ফর্মুলা নির্দিষ্ট করেন৤ আমরা সাধারণ মানুষ সম্পূর্ণ-করা একটি পূর্ণাঙ্গ অভিধান চাই৤ শুধু ডাইনে বাঁয়ে উপরে নিচে বলে দিয়ে দূর থেকে নির্দেশ দিলে হবে না৤ সেটা বিশেষজ্ঞদের জন্য চলতে পারে, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য নয়৤ অথচ সাধারণ মানুষই সবাই;বিশেষজ্ঞ হাতেগোনা গুটি৤ দোকানের সাইনবোর্ড থেকে শুরু করে চিঠিপত্র লেখা সর্বত্রই তো বানান বিরাজ করে৤ সেজন্য বানান সংস্কার বা সংশোধন ব্যাপারটাও হতে হবে সর্বজনবোধ্য, সর্বজনগ্রাহ্য৤বস্তুত স্কুলের ছাত্রদের জন্য, বা আমার মতো অর্ধশিক্ষিতের জন্য যা হবে সরল৤ সহজে সব সময়ে যা মেনে চলা যাবে৤
          সেজন্য সংস্কৃত বা অন্য ভাষার শব্দ ইত্যাকার বিভেদে না গিয়ে বানানে একটিই মাত্র নিয়ম হতে হবে৤ বানানটা মানুষের প্রয়োজনে মানুষেরই তৈরি, তা জল-বায়ুর মতো প্রাকৃতিক কোনও ব্যাপার নয়৤ বাংলা বানান সংস্কারের ক্ষেত্রে এমন একটা মনোভাব দেখানো হয় যেন, সংস্কৃত থেকে বাংলাভাষার জন্ম৤ আর যদি সত্যিই তা হত, তবু বানানে সমতা আনতে একটাই  সরল নিয়ম চালু হবে, যা সবাই সহজে মেনে চলতে পারবেন৤
          বাংলা বানান-সংস্কার হবে বর্ণ তথা ধ্বনি ধরে, শব্দ ধরে ধরে নয়৤বাংলার মৌলিক ধ্বনিগুলি শুধু থাকবে, এবং সেই মৌলিক ধ্বনি ধরেই বানান নির্দিষ্ট হবে৤         
          দ্বিতীয়ত, সকল সংস্কার একবারে করার কোনও চেষ্টাই করা হবে না, একটু একটু করে করতে হবে৤ তাই, মাত্র একটি সংস্কার সঠিক বিন্দুতে করলেই, সমস্যা অনেকখানি কমে যাবে৤ অঙ্ক কষে, বা তথ্য সংগ্রহ করে কোন্‌টিতে হাত দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করতে হবে, এবং তা থেকে নির্বাচন করতে হবে সঠিক সংস্কারের জায়গাটি বা বিষয়টি৤ এজন্য প্রথমে বাংলা বর্ণতুলনাংক বা Letter frequency নির্ধারণ করতে হবে৤ সকল বর্ণ বা ধ্বনিতে একত্রে হাত দেওয়া যাবে না, বা একবারে সংশোধন করা হবে না৤ তেমন করতে চাইলে তখন বাংলাভাষাকে আর চেনাই যাবে না৤ তাই সে উন্মাদ প্রয়াস করলে চলবে না৤ তাই বাংলা বর্ণতুলনাংক তৈরি হল৤