মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০১৬

বাংলা লেখা কেমন হবে-পাঁচ--২০১৬

বাংলা লেখা কেমন হবে-পাঁচ--২০১৬ 




বাংলাভাষা সমিতির পত্রিকা “বাভাস”
সেখানে এই লেখাটি জুন ২০১১ থেকে 
ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে৤
সেটিই এখানে আপলোড করা হল৤  





সবটা ঠিক মতো পড়তে হলে ফন্ট ফ্রি ডাউনলোড করুন এখানে ক্লিক করে:--







সঙ্গে দেওয়া ফাইল দেখে নিতে হবে৤

অহনলিপি-বাংলা১৪ ডিফল্ট টেক্সট ফন্ট সেটিং
(AhanLipi-Bangla14 Default text font setting)
Default text font setting ডিফল্ট টেক্সট ফন্ট সেটিং

এবং

অহনলিপি-বাংলা১৪ ডিফল্ট ইন্টারনেট ফন্ট সেটিং
(AhanLipi-Bangla14 Default Internet font setting)
Default Internet font setting ডিফল্ট ইন্টারনেট ফন্ট সেটিং

 
on internet(Mozilla Firefox)
(top left) Tools  
              Options > contents
              Fonts & Colors
              Default font:=AhanLipi-Bangla14
                        Advanced...
                                    Fonts for: =Bengali
                                    Proportional = Sans Serif,   Size=20
                                    Serif=AhanLipi-Bangla14
                                    Sans Serif=AhanLipi-Bangla14
                                    Monospace=AhanLipi-Bangla14,  Size=20
                                    -->OK
            Languages
            Choose your preferred Language for displaying pages
            Choose
            Languages in order of preference
            Bengali[bn]
            -->OK
  --> OK

          এবারে ইন্টারনেট খুললে ‘অহনলিপি-বাংলা১৪’ ফন্টে সকলকিছু দেখা যাবে৤ নেটে একই ফন্টে সব কিছু লেখাও যাবে৤







বাংলা লেখা কেমন হবে-পাঁচ--২০১৬


 বাংলা লেখা কেমন হবে-পাঁচ--২০১৬






বাংলা লেখা কেমন হবে
মনোজকুমার দ. গিরিশ 
পর্ব-১৫ 



          অনেক দিন ব্যবহারের ফলে যেমন আমাদের একটি সুন্দর জামা রং উঠে বিবর্ণ হয়ে যায়, ভাষায়ও এক-একটি বর্ণ দীর্ঘ ব্যবহারের কারণে তার বর্ণরূপে সামান্য হলেও বিচ্যুতি ঘটে৤ এর উদাহরণ সকল ভাষাতেই পাওয়া যাবে৤ বাংলাতেও পাওয়া যাবে৤ যেমন ধরি বাংলায় ‘ষ’ বর্ণটি এখন একটি বিবর্ণ বর্ণ৤ এর বর্ণত্ব এখন আর নেই, অন্তত বাংলা বর্ণমালায় নেই৤ ভাষায় বর্ণ কাকে বলে? কোনও লিপি যখন উচ্চারণযুক্ত হয়ে অর্থপূর্ণ ধ্বনি বহন করে এবং ভাষায় ব্যবহৃত হয় তখনই কেবল তা বর্ণ৤ তাই যখন সেই উচ্চারণ ক্রমে বিলুপ্ত বা রহিত হয় তখন তা আর সেই ভাষার বর্ণ থাকে না, যদিও তার লিপিরূপ তখনও চালু থাকতে পারে, বা থেকে যায়৤ বাংলায় এর উদাহরণ যেমন ‘ষ’৤ এমনি আরও একাধিক বর্ণ আর বাংলা বর্ণমালার বর্ণ নয়, কিন্তু তারও লিপিরূপ আমরা এখনও বহন করে চলেছি বলে সেগুলোকে আমরা বাংলা বর্ণ বলেই মনে করি৤ এগুলি বাংলা বিবর্ণ বর্ণ৤ বিদ্যাসাগরের আগে বাংলায় ছিল ১৬ স্বর, এবং ৩৪ ব্যঞ্জন বর্ণ, এই মোট ৫০ বর্ণ৤ বিদ্যাসাগর বাংলা বর্ণমালাকে আমূল সংস্কার করে করেন ১২ স্বর এবং ৪০ ব্যঞ্জন, অর্থাৎ বেড়ে হয় ৫২ বর্ণ৤ পরে স্বরবর্ণ থেকে ঌ(লি) বর্ণ আপনিই বাতিল হয়ে গিয়ে মোট বর্ণ হয় ৫১টি৤ পরে ব্যঞ্জনবর্ণ থেকে অন্তস্থ-ব(ৱ) বাদ দিয়ে বাংলায় মোট বর্ণ হয় ৫০টি৤ এই ৫০টি বর্ণও কিন্তু সবটা বাংলার প্রকৃত বর্ণমালাকে প্রতিফলিত করে না৤ আসলে বাংলায় আছে মৌলিক ৭টি স্বর, এবং ৩৫টি ব্যঞ্জন, এই মোট ৪২টি বর্ণ৤
স্বরবর্ণ= অ আ
               
              উ ●
         
              এ ●
              ও ● 
এবং সঙ্গে নবাগত ধ্বনি জন্য এা(=এ্যা),মোট ৭ বর্ণ৤
ব্যঞ্জনবর্ণ হবে= ক খ গ ঘ ঙ
                    চ ছ জ ঝ ●
                    ট ঠ ড ঢ 
                    ত থ দ ধ ন
                    প ফ ব ভ ম
                    ● র ল ● শ
                    ● স হ ড় ঢ়
                   য় ৎ ং ঃ ঁ --মোট ৩৫টিব্যঞ্জনবর্ণ৤
স্বর এবং ব্যঞ্জনবর্ণ মিলে হবে মোট--৭+৩৫=৪২ বর্ণ৤


তাহলে ‘কালিদাস’ এবং ‘কালীপদ’ লেখা হবে কী করে? বাংলায় যদি মৌলিক স্বরবর্ণ সাতটি হয় তাহলে অ-মৌলিক স্বরবর্ণও কি আছে? সেগুলি কী কী?
          বাংলা অ-মৌলিক স্বরবর্ণ তথা যৌগিক স্বরবর্ণ আছে অনেকগুলি৤ তার দুটির লিপিরূপ আমরা দেখি, বাকিগুলির প্রত্যক্ষ লিপিরূপ নেই৤ প্রয়োজনকালে সেগুলি আমরা গঠন করে নিই৤ দুটি মাত্র যৌগিক স্বরবর্ণের প্রচলিত লিপিরূপ হল -- ঐ, ঔ৤ এদুটি আসলে হল-- ঐ=ওই, ঔ=ওউ৤ দুটি করে মৌলিক স্বরধ্বনি মিলে এগুলি গঠিত হয়েছে৤ এছাড়া তিনটি, চারটি, এবং পাঁচটি অবধি মৌলিক স্বর মিলে বাংলায় যৌগিকস্বর বা সন্ধিস্বর গঠিত হয়৤ যেমন-- দ্বিস্বর = ঐ, ঔ; ত্রিস্বর =এইও>হেঁইয়ো; চতুঃস্বর =আওআঅ > খাওয়ায়; পঞ্চস্বর=আওআইআ>খাওয়াইয়া ৤ লিপি প্রচলিত আছে এমন সন্ধিস্বর বাংলায় দুটি থাকলেও লিপি প্রচলিত না-থাকা সন্ধিস্বর আছে ৩৩টি, অর্থাৎ ২+৩৩=৩৫টি মোট সন্ধিস্বর৤ বাংলায় সেগুলির উচ্চারণ আছে, তা না হলে সেগুলি যে আছে একথা বলা যেত না৤ আমাদের অলক্ষ্যে অজান্তে আমরা এগুলি অনায়াসে ব্যবহার করে চলি, সেগুলির যে লিপিরূপই নেই তা নিয়ে কোনোও মাথাব্যথা নেই, কিন্তু ঐ, ঔ--এই লিপিরূপ দুটি বাদ দিতে গেলে তুমুল হৈ-চৈ হবে৤ তেমনি আমরা বাংলায় ‘ঋ’ উচ্চারণ করি না, পণ্ডিতেরা বলছেন, বাংলাভাষার জন্মের আগেই বাংলায় স্বররূপে  ‘ঋ’ লুপ্ত৤কিন্তু তবু তাকে আমরা রেখে দিয়েছি এবং বহন করে চলেছি৤ আসলে এটা আমাদের সম্পদ নয়, বরং বিপদ৤ যেমন, ক্রিকেট লিখব নাকি লিখব কৃকেট? ঠিক তেমনি কালিপদ নাকি কালীপদ, কালিদাস নাকি কালীদাস? যার প্রকৃত অস্তিত্বই নেই তাকে হাতড়ে হাতড়ে ছাড়া ব্যবহার করা যায় না৤ আর তেমনি করে করলে ভুল হবে, নাকি ‘ভূল’ হবে তা নিয়ে মহা ধন্দে পড়তে হয়৤ শক্ত মাটির উপরে পা দিয়ে চলা সহজ, কিন্তু অনিশ্চিত কাদাভরা জলায় হাঁটা কঠিন, কোন্ সময়ে যে পা গভীর কাদায় আটকে যাবে তা বলা যায় না, পাহাড়ের চুড়োয় উঠতে গেলে যেমন বরফের উপরের রূপ দেখে বোঝা কঠিন যে, পা সেখানে ঢুকে গিয়ে বিপদ ডেকে আনবে কিনা? সেখানে পদে পদে বিপদ, প্রাণ হাতে করে চলতে হয়৤ বাংলা বানানেও প্রায় সেরকমই আমাদের প্রাণ হাতে করে চলতে হয়৤ কখন যে বানানে পড়ব কাটা তা কে জানে? বানান পরীক্ষায় তাই বড় ভয়!
                   





বাংলা লেখা কেমন হবে
মনোজকুমার দ. গিরিশ 
পর্ব-১৬
      তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে বাংলাভাষার একটা ফ্রন্ট এন্ড, এবং ব্যাক এন্ড আছে৤ অর্থাৎ সম্মুখতল এবং অন্ত তল আছে৤বাংলায় ৩৫টি যৌগিক স্বর তথা সন্ধি স্বর আছে,অথচ বাংলায় প্রচলিত স্বরবর্ণ ১১টি৤আমরা জানি ইংরেজি ৫টি স্বরবর্ণ বা Vowel,কিন্তু ব্যবহার হয় ২০টি৤ অর্থাৎ ফ্রন্ট এন্ড, এবং ব্যাক এন্ড ভাষায় থাকে৤সব তথ্য বা সব রহস্য সবার জানার দরকার নেই বলে তা নিয়ে বেশি আলোচনা হয় না৤ উদাহরণ হিসেবে বলা যায় একজন শ্রোতা যখন সংগীতে মুগ্ধ হন তখন তাঁর কি সংগীতের গঠন প্রকৃতি বা ব্যাকরণ জানার দরকার হয়? তিনি গানে মুগ্ধ এটাই প্রধান ব্যাপার৤বাংলাভাষা খুব মধুর ভাষা, এমনকী বিদেশিদের কানেও সুরের লহরী তোলে৤ কেন কীভাবে তোলে তা ব্যাখ্যা করে বলা কঠিন৤বাংলাভাষা খুব শ্রুতি মধুর এটাই তার মোদ্দা ব্যাপার৤একজন
(পঙ্কজ সাহা)






বলেছেন তিনি দীর্ঘ দিন বিদেশে বাস করে আমেরিকার এক তরুণকে দেখেছেন বাংলা শিখতে৤ কেন সে বাংলা শিখতে আগ্রহী হল জানতে চাওয়ায় তার জবাবে সে জানিয়েছে যে, বাংলা হরফ এত সুন্দর যে তা তাকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করেছে৤এসব কথা বাঙালিকে আনন্দ দেবে৤ কিন্তু তবু কিছু প্রশ্ন থেকে যায়৤ বাংলা ভাষা নিয়ে আমরা যত আবেগ প্রকাশ করি বাংলা নিয়ে আমরা ততোটা সত্যিই আগ্রহী নই৤ এটাই নির্মম সত্য৤
          বাংলা বানান বড় অনিয়ত, তা নিয়ে যে প্রবল সমস্যা তার সমাধান হয়নি, হচ্ছে না৤ একটি পত্রিকায় তার কারণ উল্লেখ করেছি৤ তা হল আমরা প্রত্যেকে নিজেকে বড় বেশি পণ্ডিত মনে করি৤ যেন অন্যের যুক্তিসংগত কথা শোনারও আমাদের দরকার নেই৤ আমার মত এই --ব্যাস্৤ কে কী বলল তাতে আমার কী? বাংলা আমার মাতৃভাষা আমি আমার মতো বাংলা লিখে যাব৤ কে আমাকে ঠেকাবে? ফলে বাংলায় বানান যথেচ্ছ৤ বাংলায় আছে প্রায় দেড় লাখ শব্দ, তার বোধ হয় দশ লাখ বানান হয়! এক-এক শব্দের একাধিক বানান৤ আর তা হবার বীজও পোঁতা আছে ভাষার বর্ণমালার মধ্যে৤ সেসব সংশোধন একবার করেছিলেন বিদ্যাসাগর, তার পরে আর তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু হয়নি৤ অনেক লিপিই বাংলায় আছে যেগুলি অবান্তর, অপ্রয়োজনীয়৤   সেগুলি বাংলা বর্ণই নয়৤ কিন্তু তা দূর হবে কীভাবে? তার সংস্কার কে, বা কারা করবেন?
          লিপি তথা বর্ণ সংস্কার করতে গেলে সবাই ফোঁস করে উঠবেন৤ এটা বা এই বর্ণটি যে বাংলায় নেই তা কীভাবে প্রমাণিত হল? ইত্যাকার কত কত সমস্যা হাজির করা হবে, এবং সমস্যা ক্রমে জটিল থেকে জটিলতর হবে৤ শেষ অবধি হাল ছেড়ে দিতে হয়৤ বিদ্যাসাগর সেযুগে যে কীভাবে পেরেছিলেন তা অনুমান করা কঠিন নয়৤ সমাজসংস্কার করতে গিয়ে তো শেষ অবধি তাঁকে দেশ থেকে বিতাড়িতই হতে হল! শেষ জীবনের ঠাঁই হল বিহারের কার্মাটাঁড়৤ এখন সেটা ঝাড়খণ্ডে, জামতারায়(কাছাকাছি গিরিডি, মধুপুর)৤ তিনি সেখানে স্বাস্থ্য-উদ্ধারের জন্য গিয়েছিলেন বলে আমরা ব্যাপারটাকে সম্মানজনক আবরণ দিয়েছি৤ কিন্তু বঙ্গদেশ ত্যাগের এব্যাপারে দুটি সভায় গায়ক অজিত পাণ্ডে(এখন প্রয়াত) যে তথ্য দিয়েছেন তা অতি বিষাদময়৤ তাঁর বিশাল কর্মময় জীবনে কত যে কাঁটা, এবং কত যে ঝাঁটা খেয়েছেন তা বলে শেষ হবে না৤
          বাংলায় আছে ১১টি স্বরবর্ণ মানে স্বরবর্ণের ১১টি লিপি, কিন্তু বাংলায় স্বরধ্বনি আছে প্রায় ৩৫টি৤ যেটা অবিশ্বাস্য৤ আর স্বরবর্ণ বলে যেগুলি প্রচলিত আছে তার কয়েকটি সত্যিই বাংলায় নেই৤
লিপি প্রচলিত আছে এমন সন্ধিস্বর বাংলায় দুটি থাকলেও লিপি প্রচলিত না-থাকা সন্ধিস্বর আছে ৩৩টি, অর্থাৎ ২+৩৩=৩৫টি মোট সন্ধিস্বর৤ বাংলায় সেগুলির উচ্চারণ আছে, তা না-হলে সেগুলি যে আছে একথা বলা যেত না৤ আমাদের অলক্ষ্যে অজান্তে আমরা এগুলি অনায়াসে ব্যবহার করে চলি সেগুলির যে লিপিরূপ নেই তা নিয়ে আমাদের কোনোও মাথাব্যথা নেই৤ ঐ, ঔ--এই লিপিরূপ দুটি বাদ দিতে গেলে তুমুল হৈ-চৈ হবে৤ এসব কথা আগেই আলোচনা করেছি৤ ‘ঐ’ হল অই, আর ‘ঔ’ হল অউ, কিংবা ওই, ওউ৤ এই যে অই/ওই, অউ/ওউ এগুলি হল সন্ধিস্বর৤ এতগুলি যে সন্ধিস্বর বাংলায় আছে সে সবগুলির যদি আলাদা আলাদা লিপি হয়, তবে কেবল স্বরবর্ণ মনে রাখতেই পালাই পালাই ব্যাপার হত৤তাই সেসব অহেতুক লিপিকৃত হয়নি৤হয়নি তাই রক্ষে,নইলে আমাদের যে কী দুর্দশা হত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৤ধরি খাওয়াইয়া, শব্দটিতে যে-সন্ধিস্বরটি আছে তা হল আওআইআ =খাওয়াইয়া৤ এর একটি লিপিরূপ ধরি করা হল , এরকম করে ৩৫টি সন্ধিস্বরের তথা স্বরবর্ণেরই রূপ দিতে গেলে আমাদের অনেকের কেবল স্বরবর্ণ শিখেই লেখাপড়া শেষ হত৤ এই যে ড্রপ-আউট তা কিন্তু বাংলায় আছেই, তখন একটু বেশি মাত্রায় হত এই যা৤ বাংলা বানানের গলিঘুঁজি সবাই সামলাতে পারিনা৤ ড্রপ-আউটের মাধ্যমে পালিয়ে বাঁচি৤ 









বাংলা লেখা কেমন হবে   
মনোজকুমার দ. গিরিশ 
 


পর্ব-১৭
          একজন মনস্ক পাঠক প্রশ্ন তুলেছেন-- যত, ততো, মতো, মত শব্দের বানান নিয়ে৤ অভিধান বলছে, মত=অভিমত/সিদ্ধান্ত, মতো=সদৃশ, এবং যত বানানে ‘তো’ হবে না৤ আর ‘ততো’ ব্যাপারটা কী? এটা আমারই এলেমদারি! ত এবং ৩ লিখলে তফাত বোঝা কঠিন হতে পারে৤ সেজন্য ৩৩ এবং তত লিখলে ছাপায় একটু গোলমাল হলে বোঝা বেশ কঠিন হবে৤ তাছাড়া, এমনিতেও দুটোর তফাত বোঝা বেশ মনোযোগের ব্যাপার৤ যখন আমি বাংলায় কারিগরি বর্ণমালা তৈরি করেছি তখন এটা মনে হয়েছে, সেখানে ত এবং ৩ দুটোরই লিপিরূপ একই৤যেমন (ত), (তিন)৤তখন আমার মনে হল তত না লিখে ততো লিখলে আর এ সমস্যা থাকে না৤ কারিগরি বর্ণমালায় হরফের কোনও মাত্রাচিহ্ন রাখা হয়নি৤ রাখলে সমস্যা হত৤ তাই তা দিয়ে যখন লেখালিখি হবে, তখন কী হবে? সেজন্য আমি চাইলাম ‘তত’ না লিখে “ততো” লিখতে৤ বাংলাদেশের বিজ্ঞানভিত্তিক একটি ওয়েবসাইটে কিছু লেখালিখি করার সময়ে একজন বিজ্ঞানলেখক এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন৤ আমি তার এই জবাব দিতে তিনি সেকথা সানন্দে মেনে নেন৤
          পাঠকদের ধন্যবাদ, এধরনের একটি রসকস হীন রচনা, পড়ার কষ্ট করার জন্য৤ আমি পণ্ডিত নই, যখন যা মনে হয়েছে সেটা পাঠকদের দরবারে তুলে ধরেছি তাঁদের বিজ্ঞ অভিমতের জন্য৤ সব সময়ে যে সমর্থন পেয়েছি তা নয়, যেখানে পাইনি, সেখানে ভেবেচিন্তে পশ্চাৎ অপসরণ করেছি৤ খুঁটি গেড়ে বসিনি, কারণ আমার খুঁটির জোর নেই!
          বাংলা বানান নিয়ে যে, ‘চীন-চিন’ ব্যাপার তা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কাছে বড় বেদনাদায়ক৤ কোন শব্দের কী যে বানান, আর কোন শব্দের কী যে উচ্চারণ, তা নিয়ে আমরা গোলকধাঁধায় পড়ি৤ লেখক দেবেশ রায় বলেছেন, “খবরের কাগজগুলি একসঙ্গে বসে যদি এই নিয়ে একটা সম্মত ব্যবহারবিধি তৈরি করতে পারতেন, তাতে কাজের অনেক সুবিধে হত৤” বানান হল এক অলিখিত সামাজিক বিধি, তা সর্বসম্মত হওয়া উচিত৤ কিন্তু কী যে হচ্ছে তা বোঝা দুষ্কর হয়ে পড়ছে৤ বাংলায় জ+.(বিন্দু)=জ় ব্যবহার করা হবে কিনা তা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন৤ বাংলায় আছে চারটি বিন্দুযুক্ত বর্ণ--র ড় ঢ় য় হাতে করে লেখার সময়ে প্রতিটিতে কলম তুলে বিন্দু দিতে হয়, ফলে সময় বেশি লাগে, লেখার ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে৤লেখা বিন্দু-কলঙ্কিত হয়ে পড়ে৤ আবার বিন্দু বাদ পড়ে গেলে,বা ভুল করে ব,ড,ঢ,য-তে বিন্দু পড়ে গেলে অর্থ পালটে যেতে পারে৤খেয়াল করলে দেখা যাবে বাংলা লেখায় প্রতিটি লাইনেই একাধিক বিন্দুযুক্ত হরফ থাকে৤আর বাংলায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বর্ণ হল--‘র’৤সাধারণভাবে এর ব্যবহারের হার হল--১০.৩৭%শতাংশ৤র-এর আবার অন্য দুটি রূপ আছে, রেফ এবং র-ফলা৤বহুকাল আগে যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি মহাশয় ‘র’-কে বিন্দুহীন লেখার জন্য নাগরি ‘র’() ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন৤ কিন্তু সেটিও কলম না-তুলে টানা লেখা যাবে না৤ বাংলা লিপির এক অমিত সুবিধা হল, হাতে করে টানা লেখা যায়৤ র-এর জন্য পেটকাটা ব=ৰ, ব্যবহার করার চেষ্টাতেও সুবিধে হবে না, কারণ হাতে করে টানা লিখতে গেলে তা হাতেলেখা ষ-এর মতো মনে হতে পারে৤ জ্ঞানী মানুষেরা এর একটা সুষ্ঠু সমাধান দিলে ভালো হয়৤ 
আমি বলেছিলাম


বাংলায় বর্ণ ‘য়’ ব্যবহারও প্রচুর (২.১৯৩% শতাংশ) আর ড় ব্যবহারও হয় যথেষ্টই (০.২৮৫৩%)৤ এই অবস্থায় নতুন আরও একটি বিন্দুযুক্ত হরফ ব্যবহার করে নতুন করে সংকট সম্ভাবনা/আশঙ্কা তৈরি করা ঠিক নয়৤  র এবং য় হরফ দুটির লিপিগঠন এমন যে তার তলায় বিন্দু বসাবার একটি ধারণস্থান বা ভাঁজ রয়েছে৤ সেখানে তলাকার বিন্দু সহজে এঁটে যায়৤ কিন্তু ড় এবং ঢ় তেমন নয়৤ এদের বিন্দু ধারণের স্থান নেই বরং তলাকার অর্ধবৃত্ত-আকৃতির নিচে যে-স্থানে বিন্দু বসানো হয়, তাতে উ-কার দিতে খুবই অসুবিধে৤  তাতে তলাকায় বিন্দু ঢেকে যায়৤ তাই একটি খবরের কাগজ এই সংকট সামলাতে হিমসিম৤ পরীক্ষামূলকভাবে তারা (ড়ু) লিখতে কখনও ‘ড়’ছোটো করে করে লিখছে

কখনও আবার তা লিখছে না৤ তাই বলে এই 







     আমরা তো বাংলা বর্ণেরই সঠিক উচ্চারণ ব্যবহার করতে দ্বিধাগ্রস্ত, তাহলে অন্য ভাষার উচ্চারণে কোথায় Z(=জ়) হবে তা নিয়ে কেন  এত উদ্যম? ‘পরীক্ষা’ লিখতে কি আমরা পরিখ্‌খা/ পরিখ্খা লিখতে পারি? বাংলায় বানান নিয়ে যে কূট ব্যবস্থা তাতে অবিশ্বাস্য হলেও “সবিশেষ” শব্দটি ১০৮ রকম করে লেখা যায়৤স-৩,ি-২,ব-২,ে-১,শ-৩, ষ-৩,ফলে এটি দাঁড়ায় ৩×২×২×১×৩×৩=১০৮, দুরকম ব তথা ব, অন্তঃস্থ ধরে৤ তাই আর যেচে নতুন উপায়ে সংকট বাড়িয়ে কী হবে? 






কোন মন্তব্য নেই: